Sunday 24 September 2023

বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ (পর্ব- ১-৩)

দেখতে দেখতে আমার বিয়ের দিন চলে আসলো। এমনকি বিয়েও হয়ে গেছে। আমি এখন বাসর ঘরে ঢুকে দেখি জান্নাত খাটের উপর বসে মাথার আঁচল ফেলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস খাচ্ছে।

আমি তো বড় ধরনের একটা ঝটকা খেলাম। জান্নাত এখানে কেন? আমার বিয়া হয়েছে তো জান্নাতুল মাওয়া এর সাথে। ওরে সিট জান্নাতুল মাওয়া তো জান্নাতের পূর্ণ নাম।

এসব ভাবছিলাম হঠাৎ পায়ে কারো ছোঁয়া পেয়ে বাস্তবে ফিরলাম। আমি এক ঝটকায় সরে আসলাম।

আমি: তুই এখানে কেন?

জান্নাত: আমি এখন তোমার স্ত্রী সো তুই তুকারি না বলাই বেটার হবে মনে হচ্ছে।

আমি: আমি তোর থেকে জ্ঞান চাচ্ছি না। আর হ্যা কিসের বউ, আমি তো কোন ভাবেই মেনে নিতে পারবো না।

জান্নাত: কেন মানতে পারবে না?

আমি: কেননা আমি তোর জন্য আমার জীবন থেকে একটা বছর পরিবার পরিজন থেকে দূরে থেকেছি।

জান্নাত: আসলে আমি……….

আমি: সাট আপ, আমি তোর থেকে কোন কৈফিয়ত চাচ্ছি না। আর হ্যা অতিসত্বর আমি তোকে ডিভোর্স দেবো।

জান্নাত: কিহ?

আমি: হ্যা তাই।

এই কথা বলে আমি ওয়াস রুমে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে দেখি জান্নাত খাটের উপর বসে বসে কাঁদছে। আমি দেখেও না দেখার ভান করে বললাম।

আমি: আমি যেহুতু তোকে বউ হিসাবে মানি না। সুতরাং তুই এক সাথে খাটে ঘুমাতে পারবি না।

জান্নাত: আমি কোথায় ঘুমাবো? এখানে সোফাও তো নেই।

আমি: তুই কোথায় ঘুমাবি এটা তোর বিষয় আমার না।

জান্নাত: আমি খাটেই ঘুমাবো অন্য কোথাও ঘুমাতে পারবো না।

এই কথা বলে শুয়ে পড়লো। আমার দিকে মুখ করে। আমার তো রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমি উঠে রুমের বাইরে চলে আসছিলাম এমন সময় পিছন থেকে জান্নাত হাত টেনে ধরলো।

জান্নাত: কোথায় যাচ্ছো?

আমি: তুই আমার হাত ছাড়।

জান্নাত: আগে বলো কোথায় যাচ্ছো?

আমি: আমি হাত ছাড়তে বলেছি। না ছাড়লে এমন কিছু করে ফেলবো যা তুই কল্পনাও করিসনি।

জান্নাত: তুমি যায় করো আমি ছাড়ছি না। (আরো শক্ত করে ধরে)

আমি এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে ঠাস ঠাস করে ২ টা চড় দিলাম। জান্নাত অবাক দৃষ্টিতে গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো।

আমি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকলে ওর থেকে বেশি কষ্ট পাবো তাই সোজা সাদে চলে আসলাম। আর ভাবতে লাগলাম আগের দিন গুলো কতই না ভালো ছিল।

জান্নাত: নাসিম চল। আজ আর ক্লাস করবো না।

আমি: আমি তো অন্য দিনও করি না। আজও করবো না একা কোন ব্যাপার না। কিন্তু তুই ক্লাস করবি না কেন?

জান্নাত: ভালো লাগছে না তাই।

আমি: তা কোথায় যাবি শুনি?

জান্নাত: ……. পার্কে চল।

আমি: ওকে চল। তুই হাট আমি বাইক নিয়ে আসি।

জান্নাত: না। আমার ভালো লাগে না। তুই কাজে অকাজে ব্রেক কষবি।

আমি: তুই এমন কোন পার্সোন না যে, আমার ব্রেক করতে হবে।

জান্নাত: হুম জানি আমি তো তোর কেউ নেই। (অভিমান করে)

আর বাইক নিলাম না। আমি আর জান্নাত কলেজের গেট দিয়ে বের হয়ে একটা রিকশার সামনে গেলাম।

আমি: মামা …. পার্কে যাবেন?

রিক্সা ওয়ালা: হ মামা যামু। আমনে উইডা পরেন।

জান্নাত কোন কথা না বলে নাক টানছে আর চোখ মুচছে। হয়তোবা আমি বেশি বলে ফেলেছি।

রিক্সায় করে পার্কে চল আসলাম কিন্তু জান্নাত একটা কথাও বললো না। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে হাঁটতে লাগলাম।

আমি: জান্নাত সরি। আমি কথাটা তেমনটা মিন করে বলিনি।

জান্নাত: না তেমন কিছু না।

আমি: তাহলে তুই কথা বলছিস না কেন?

জান্নাত: ভালো লাগছে না।

আমি: ওকে আমি সেই শুরশুরি দিয়ে মন ভালো করে দেই।

জান্নাত: না ভাই তোর পায়ে ধরি তুই আমাকে শুরশুরি দিবি না।

আমাকে আর ঠেকায় কে? আমি জান্নাতকে শুরশুরি দিলাম অমনি জান্নাত আমাকে মারতে গেলে আমি দৌড়ে পালাতে গেলাম আর একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে গেল। মেয়েটি পড়ে গেল।

আমি: সরি সরি আপু। আমি খিয়াল করিনি।

মেয়ে: তোর এতবড় সাহস তুই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিস? (উঠে দাঁড়িয়ে)

আমি: দেখুন আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি।

মেয়েটি ঠাস করে একটা চড় দিলো আমার গালে। আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। সরি বলার পরেও আমাকে মারলো।

হঠাৎ জান্নাত মেয়েটিকে মারতে শুরু করলো। চড়ের উপর চড় মারতে লাগলো। মেয়েটি শুয়ে পড়েছে তাও মারতে লাগলো। অবস্থা বেগতিক দেখে জান্নাতকে সরিয়ে আনতে গেলাম।

আমি: কিরে তুই আবার কি শুরু করলি?

জান্নাত: আমি তো ওকে মেরেই ফেলবো। ও তোর গায়ে হাত দিয়েছে। (মেয়েটির চুল টানতে টানতে)

আমি: ছেড়ে দে মেয়েটাকে (জোর করে ছাড়িয়ে নিলাম)।

জান্নাত: তুই আমাকে ছাড় ওকে তো আজ মেরেই ফেলবো।

আমি: আপু আপনি এখান থেকে যান। জান্নাতের মাথা ঠিক নেই।

মেয়েটি কোনরকম উঠে দৌড়ে চলে গেল। আমি জান্নাতকে একটা বেঞ্চের উপর বসালাম।

আমি ; এখানে বস। আগে মাথা ঠান্ডা কর।

জান্নাত: তুই ঐ সাকচুন্নিকে কিছু বললি না কেন? (আমার কলার ধরে)

আমি: তুই কি এখন আমাকে মারা শুরু করবি?

জান্নাত: দরকার হলে তাই করবো।

এসব ভাবছিলাম হঠাৎ পিছন থেকে কারো পায়ের আওয়াজে আমার ধ্যান ভেঙ্গে গেল। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি, আম্মু আর জান্নাত দাড়িয়ে কেন?

আমার তো গলা শুকিয়ে গেল। আম্মুকে আমি অনেক ভয় পাই। না জানি আম্মু আবার কি শুরু করে?


পর্ব: 2

আমার তো গলা শুকিয়ে গেল। আম্মুকে আমি অনেক ভয় পাই। না জানি আম্মু আবার কি শুরু করে?
আম্মু: কিরে তুই এই সময়ে এখানে কেন?

আমি: আ আম আম্মু খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে বাতাস খাচ্ছিলাম। (মিথ্যা বললাম)
আম্মু: খোলা আকাশের নিচে বাতাস খাচ্ছিস ভালো কথা। কিন্তু তুই এমন তুতলাচ্ছিস কেন?
আমি: কই?
আম্মু: আচ্ছা যা তোর রুমে।
আমি: হুম।

তারপর আর কোন কথা না বাড়িয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। কিছুক্ষণ পর জান্নাতও আসলো।
আমি: তুই এখানে কেন?
জান্নাত: আমি আমার বরের রুমে আসবো না তো কোথায় আসবো?
আমি: আমি আগেও বলেছি যে আমি তোকে কখনই মেনে নেবো না। তারপরেও তুই ছেচড়ার মতো এখানে আসছিস কেন?
জান্নাত: ওকে ঠিক আছে আমি নিচেই ঘুমাচ্ছি এবার খুশি তো?

আমি: আমি তো সেদিনই সব চেয়ে বড় খুশি হবো, যেদিন তুই একেবারেই আমার থেকে দূরে সরে যাবি।
জান্নাত আর কোন কথা না বাড়িয়ে খাটের উপর থেকে একটা বালিশ আর একটা কাঁথা নিয়ে নিচে শুয়ে পড়ল।
আমিও আর কোন কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকাল বেলা…..
চোখে পানি পড়াতে ধরফর করে উঠে পড়লাম। সামনে তাকিয়ে দেখি জান্নাত মুচকি মুচকি হাসছে। আমার তো রাগে শরীর ১০০ তে ১০০ হয়ে গেছে।
আমি: আমার চোখে পানি দিলি কেন?

জান্নাত: তোমার শখ পূরণ করলাম।
ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পর দিলাম।
আমি: তুই আজ সকালেই রেডি হয়ে থাকবি।

জান্নাত: কেন? (কান্না করে দিয়ে)
আমি: আজ লয়ারের কাছে যাবো। তোকে আজকেই আমি ডিভোর্স দেবো।
জান্নাত: প্লিজ তুমি এমনটা করো না। আমি তাহলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবো।

আমি: আমি আগে তালাক দিয়ে দেই তারপর তোর যা ইচ্ছে তাই করতে পারিস।
জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে ওয়াস রুমে চলে গেল। জান্নাত ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে ভিজতে লাগলো আর বলতে লাগলো।

জান্নাত: নাসিম আমি তোমাকে সেই বুঝতে শেখার পর থেকে ভালোবাসি। আমি বিভিন্ন সময় তোমার শখ আললাদ জেনে নিতাম যাতে আমি নিজেকে তোমার মত করে সাজিয়ে নিতে পারি।

তুমি বলেছিলে যে, তুমি অনেক বার ডাকার পরেও না উঠলে তোমার বউ তোমার মুখে চুলের পানি দিতেই উঠে পড়বে। আমি ঠিক তোমার শখ পূরণ করতে এমনটা করেছি।

আর তুমি আমাকে ভুল বুঝলে, এমনকি আজ আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বললে যেটা আমি কখনো কল্পনাও করিনি।
নাসিম সত্যি সত্যিই আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তুমি যদি আজ আমাকে ডিভোর্স দেও তাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।

এদিকে……..
আমি একটা ঘুম দিলাম। সকাল হলে ঘুম থেকে উঠে আমি (নাসিম) ফ্রেস হতে যাবো কিন্তু জান্নাতের বের হওয়ার কোন নাম গন্ধ নেই। কি করি কিছুই ভালো লাগছে না। জান্নাত আবার ঢুকেছে নাকি সেই ঢুকেছে আর বের হয়নি।

আমি আর অপেক্ষা না করে দরজায় টোকা দিলাম। কিন্তু ভিতরে শুধু পানি পড়ার শব্দ শুনতে পেলাম তা ছাড়া আর কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছি না।
আমি: জান্নাত।

জান্নাত:…………

আমি: জান্নাত, ঐ জান্নাত তুই আমার কথা শুনতে পারছিস?

জান্নাত: …………… ‌

কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। জান্নাত আবার কিছু করে বসেনি তো? আমার তো মাথায় কিছুই আসছে না।

আর ভাবাভাবি করে লাভ নেই। দরজাটা ভেজ্ঞে ফেলতে হবে। তাই একটু দূরে সরে দৌড়ে এসে একটা লাত্থি দিতেই দরজার লক খুলে গেল।
ভিতরে ঢুকে দেখি জান্নাত পড়ে আছে আর এদিকে ঝর্ণা চলছে তো চলছেই। আমি কাছে গিয়ে ডাক দিলাম।

আমি: জান্নাত তোর কি হয়েছে?
জান্নাত ….(জান্নাত কোন কথা বলছে না। )

আমি বুঝতে পারলাম যে, জান্নাত অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে জান্নাতকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
এখন তো জান্নাতের পোশাক পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু আমি কিভাবে করবো? আর আমমুকে ডাকি তাহলে তো আম্মু আবার অনেক প্রশ্ন করবে। কি হয়েছে, কিভাবে হলো, কখন হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

এসব ভাবছিলাম হঠাৎ করেই জান্নাত নড়ে উঠলো। যাক ভালো হলো জান্নাতের জ্ঞান ফিরেছে। জান্নাত টিপটিপ করে চোখ খুলে তাকালো। আমি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছি।

জান্নাত: আমি এখানে কেন? আমার কি হয়েছিল?
আমি: কি হয়েছে তা তো জানি না। তবে তুই ওয়াস রুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলি।

তারপর জান্নাতের সব মনে পড়ে গেল যে, জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে হয়তো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।
তারপর জান্নাত আস্তে আস্তে উঠে ফ্রেস হতে গেল। ফ্রেস হয়ে আসলে আমি ফ্রেস হতে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে দেখি জান্নাত খাটের উপর বসে আছে।
জান্নাত: চলো সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। নাস্তা করতে হবে না?

আমি: হু।
হঠাৎ করেই মোবাইল বেজে উঠল। আমি মোবাইল পিক করে কানে ধরলাম।
আমি: হ্যালো।

মেজর: নাসিম তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে চলে আসো।
আমি: স্যার কোন সমস্যা?

মেজর: হ্যা অনেক সমস্যা। তুমি দ্রুত চলে আসো।
আমি: ওকে স্যার।


পর্ব: 3

মেজর: হ্যা অনেক সমস্যা। তুমি দ্রুত চলে আসো।

আমি: ওকে স্যার।
জান্নাত আগেই নাস্তার টেবিলে চলে গেল। আমি নিচে নেমে আসলাম। নাস্তা করতে বসলাম।
আব্বু: তোকে খুব প্রেশান দেখা যাচ্ছে কোন সমস্যা?

আমি: না।
আব্বু: তাহলে তোকে এমন লাগছে কেন?
আমি: তেমন কোন ব্যাপার না।

জান্নাত বসে বসে শুধু খাবার নাড়ছে কিন্তু মুখে কিছুই দিচ্ছে না আর আমি যত দ্রুত সম্ভব নাস্তা শেষ করার চেষ্টা করছি।
আব্বু: এত দ্রুত খাচ্ছিস কেন?

আমি: একটা খুব ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে। তাই একটু তাড়া আছে।
আব্বু: খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করতে নেই। তুই ধীরে ধীরে খাবার খা।
আমি: আমার খাওয়া শেষ।

আর কোন কথা না বলে সোজা আমার রুমে চলে আসলাম। এসে বাহিরে যাওয়ার ড্রেস পড়ে নিলাম। এমন‌ সময় জান্নাতও উপস্থিত হলো।
জান্নাত: প্লিজ আর একবার ভেবে নিলে হয় না?

আমি: মানে? (জান্নাত কোন বিষয়ে কথা বলছে নাসিম বুঝতে পারছে না)
জান্নাত: আমি তোমার সব কথা মেনে চলবো। কখনো তোমার কথার বিপরীত করবো না। তাও প্লিজ আমাকে ডিভোর্স দিয়ো না।
আমি: ……(ও তাহলে এই ব্যাপার। আমি আবার মনে করছি ও আমার জবের ব্যাপারে কিছু জেনে গেল নাকি?)
জান্নাত: কি হলো কথা বলছো না কেন?

আমি: আমি ভেবে দেখি।
এই কথাটা বলেই আমি রুম থেকে বের হয়ে বাইক নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় চলে আসলাম। তারপর আমাদের অফিসের গেট দিয়ে মাস্ক ব্যবহার করে ঢুকলাম।
তারপর যখন কনফারেন্স রুমে যাবো। একজন আমার ব্যাজ চেক করে ঢুকাতে দিলো। রুমে এসে দেখি নাফি আগে থেকেই উপস্থিত আছে।
আমি: কিরে নাফি তুই কখন আসলি?

নাফি: এই তো কিছুক্ষণ আগে আসলাম।
আমি: তা কি জন্য এত জরুরী তলব করা হচ্ছে তুই জানিস?

নাফি: না। তবে জানতে পারলাম যে, কোন একটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে।
(জঙ্গি সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে অনেকের অনেক অভিমত পাওয়া যায়।
আমি: ওওও
নাফি: তা আমার খালাতো বোন ‌জান্নাতের খবর কি?
আর আমি সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হলাম যে, তুই কয়েকদিন আগেও জান্নাতের কথা শুনতে চাচ্ছিলি না। অথচ কয়েকদিন পর জান্নাতকে বিয়ে করলি?
আমি: আসলে আমি জান্নাতের সাথে চ্যালেন্জ করে অন্য একজনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।

আর সেই জন্যই আম্মুর দেখা মেয়েকেই বিয়ে করি। আর আম্মু মেয়ে পছন্দ করার কথা বলেছিল আমি আম্মুকে বলেছিলাম যে, আম্মু তোমার পছন্দ আমার পছন্দ। পরে বিয়ে করার পরে দেখতে পেলাম যে, আমি জান্নাতকে বিয়ে করেছি।

নাফি: …….
আমি: কিরে তুই এতো দাঁত কেলিয়ে হাসছিস কেন?
নাফি: তোকে বোকা বানিয়ে বিয়ের যে প্লান ছিল সেটা আমিই করেছিলাম।

আমি: ………(তা করেছিস ভালো করেছিস। আমি জেদে বসে যদি অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ফেলতাম তাহলে আমি সারা জীবনেও খুশি হতে পারতাম না। কেননা আমিও তো জান্নাতকে অনেক ভালোবাসি। )

নাফি: কিরে তুই কি এমন ভাবছিস?
আমি: কিছু না।
সবাই কনফারেন্স রুমে চলে এসেছে। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

মেজর: আপনারা হয়তো বেশিরভাগ মানুষই জানেন না, আজ আমরা কি জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছি।
সবাই: জ্বি স্যার।

তারপর অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে আসল যে বিষয়ে কথা বার্তা হয়েছে তা হলো আমাদের এখানে একটা জঙ্গি সংগঠন তৈরি হয়েছে।

আর এই সংগঠনের মাস্টার মাইন্ড হলো রেজাউল চৌধুরী। আর সে হলো এই এলাকার এমপি + সন্ত্রাস। এখন আমাদের এই বিষয়ে অনেক তথ্য যোগাড় করতে হবে। সাথে সাথে তার লোকজন কখন কোথায় যায়, কি করে, এসব বিষয়ে জানতে হবে।





Monday 19 April 2021

“শিক্ষা শিক্ষককেও পথ দেখায়”

 মা সন্তান জন্ম দেয় কিন্তু শিক্ষা দেয় শিক্ষক। একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াও পথেঘাটে বেসামাল শিশুদের সুপথ দেখিয়ে দেয়, গল্প নয় সত্যি। এক শিক্ষক একদিন কোন এক চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিল। শিক্ষক দেখতে পেল একটু দূরে /১০ বছরের দুটি শিশু একে অপরের সাথে ঝগড়া করতেছে। প্রথমে দুই শিশুর মধ্যে সামান্য কথার কাটাকাটি শুরু হয়, এক পর্যায়ে ঝগড়া মারাত্মক আকার ধারণ করে। শিশু দুটি একে অপরকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে থাকে। এমনকি একে অপরের পরিবার, পিতামাতা সম্পর্কে সত্য মিথ্যা মিশিয়ে অরুচিপূর্ণ কথা বলতে থাকে।

চায়ের দোকানে বসে শিক্ষক শিশুদের এহেন কান্ড-কারখানা প্রথম থেকেই দেখছেন। তিনি আর বসে থাকতে পারলেন না, চায়ের দোকান থেকে উঠে গিয়ে শিশু দুটিকে আদর করে মিষ্টি কথা বলে ঝগড়া থামিয়ে দিলেন। এরপর শিশু দুটির হাত ধরে তার সাথে যেতে বলেন। শিশু দুটি প্রথমে ভয় পেলেও শিক্ষকের আচরণে তার সাথে যেতে রাজি হয়। শিক্ষক শিশু দুটিকে একটি পুকুরের ধারে নিয়ে যায়। পুকুরের পানি তখন একদম শান্ত অবস্থায় ছিল এবং পানি ছিল স্বচ্ছ। শিশু দুটিকে পুকুরটি দেখিয়ে বলল- এখানে কি দেখতে পাচ্ছ? উত্তরে শিশু দুটি বলে পানি। আর কি দেখছ শিক্ষক জানতে চাইলে শিশু দুটি বলে পানি খুব পরিষ্কার, কিন্তু নিচে ময়লা জমে আছে। শিক্ষক শিশু দুটিকে বুঝাতে চায় পরিষ্কারের মধ্যেও ময়লা থাকে। এরপর শিক্ষক জানতে চায় উপরের এই পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধোঁয়া যাবে কিনা, উত্তরে শিশু দুটি হ্যাঁ বলে। তিনি খুব সাবধানে পুকুরের পানি হাতে নিয়ে শিশু দুটিকে দেখালেন, সেখানে কোন ময়লা ছিল না। এবার শিক্ষক একটি লাঠি একজনের হাতে দেন আর পুকুরের পানিতে নাড়াচাড়া করতে বলেন। এবার শিক্ষক শিশু দুটির কাছে জানতে চায়, তারা কি দেখতে পাচ্ছে। তারা বলে পানি নোংরা হয়ে গেছে। শিক্ষক জানতে চান পানি দিয়ে মুখ ধোঁয়া যাবে কিনা। তারা বলে না, তাহলে মুখও নোংরা হয়ে যাবে। এবার শিক্ষক শিশু দুটিকে বলেন, যদি পরিষ্কার পানি লাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করে তাহলে পরিষ্কার পানিও ময়লা হয়ে যায়। পরিষ্কার পানি পান করা, মুখ ধৌত করা বা গোসল করা যায় কিন্তু ময়লা পানি ব্যবহার অযোগ্য।

 শিক্ষক শিশু দুটিকে বুঝাতে চেষ্টা করল একটি পুকুরের পানি দিয়ে। পৃথিবীতে মানুষের দোষও আছে আবার গুণও আছে। আমরা যদি দোষ না দেখে গুণ গুলোকে দেখি তাহলে তা পানির প্রথম অবস্থার মতই স্বচ্ছ থাকবে এবং পরস্পরের প্রতি ভালবাসা জন্মাবে। ভালো-খারাপ দিয়েই পৃথিবীর সকল কিছু সৃষ্টি, আমরা ভালোকে গ্রহণ করি খারাপকে বর্জন করি কারণ অপরের দোষ-ত্রূটি ঘাটতে গেলে তা নিজের গায়েই লাগে। একে অপরের সাথে ঝগড়া নয়, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার নয় একে অপরের দিকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার নামও শিক্ষা। শিশু দুটি তাদের নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। শিক্ষক এভাবে পথশিশুদের নোংরা পথ থেকে ফিরিয়ে সুন্দর পথে নিয়ে আসেন। তাই একজন শিক্ষক সকলের কাছে মর্যাদা পায়, শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয় সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকের মর্যাদা রয়েছে। 

                                                                        লেখক- সুমন শিকারী

বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ (পর্ব- ১-৩)

দেখতে দেখতে আমার বিয়ের দিন চলে আসলো। এমনকি বিয়েও হয়ে গেছে। আমি এখন বাসর ঘরে ঢুকে দেখি জান্নাত খাটের উপর বসে মাথার আঁচল ফেলে হাত পাখা দিয়...